লালনের গানের ভক্ত নয়, তবু সারা জগত জুড়ে বাংলা ভাষাভাষী এমন কাউকে পাওয়া কী যাবে- যে লালনের জনপ্রিয় গানগুলি শোনেনি! বিশেষ করে ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে’- গানটি।
বাংলাদেশের পায়ুকামী আর বলাৎকারের শিকার লোকজনগুলোর গায়ে আজকাল ‘মূর্খ’ শব্দটি লেখা থাকে। তারা কথায় কথায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অজুহাত তুলে খুব সাধারণ যুক্তিবাদী মানুষদের হেনস্তা করে তাদের শক্তি-সামর্থ্য জানান দেয়। যেনো তাদের বোকা মানুষদের ভাঙিয়ে খেতে সুবিধা হয়, সেটা আর্থিক ও রাজনৈতিক অনেকভাবেই। এদের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদী শক্তি যেনো গড়ে উঠতে না পারে, সেজন্য অনুভূতির অস্ত্রটা ব্যবহার করে।
এই অনুভূতিবাদীদের শরীরে যে অনুভূতির বিশেষ অঙ্গটি গজিয়েছে, এটা স্বীকৃতি বা এই অঙ্গটি রক্ষা করতে তৎপর পুলিশ ও সরকার। আবার এই অঙ্গটি পুলিশ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই একসময় খসিয়ে দিবে, সে সময় পর্যন্ত সাবধান হে সাধুজন!
লালনের গানে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, আটক যুবক
ফেসবুক স্টোরিতে লালনের একটি গানের দুটি লাইন লিখে দেওয়ায় ইসলাম ধর্মকে কটূক্তি করার অভিযোগের পর সঞ্জয় রক্ষিত (৪০) নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
ওই যুবক শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিষার ইউনিয়নের হরি নারায়ণ রক্ষিতের ছেলে। সঞ্জয় পেশায় স্বর্ণকার।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকালে বিষয়টি ইত্তেফাক ডিজিটালকে নিশ্চিত করেছেন ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিন্টু মন্ডল। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে নারাজ ওসি। কোনো কিছু জানার থাকলে থানায় গিয়ে দেখা করার কথা বলেন তিনি।
সঞ্জয়ের ফেসবুকের স্টোরির স্ক্রিনশটে দেখা গেছে, তিনি সেখানে লিখেছেন ‘সুন্নতে খাতনা দিলে যদি হয় মুসলমান, তাহলে নারী জাতির কি হয় বিধান।’ এই দুটি লাইন লালনের ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে’ গানের অংশ।
রোববার (২৮ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে ওসি মিন্টু মন্ডল একটি জাতীয় দৈনিককে ফোনে জানান, ফেসবুকের স্টোরিতে দুটি লাইন লেখাকে ঘিরে সঞ্জয় রক্ষিত নামে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি দাবি করেছেন, এই লেখার মাধ্যমে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত হানা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তারা মৌখিক অভিযোগ করেছেন। তাই সামাজিক বিশৃঙ্খলা এড়াতে সঞ্জয়কে আটক করে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কারা অভিযোগ করেছেন, জানতে চাইলে ওসি তাদের নাম উল্লেখ না করে বলেন, স্থানীয় কয়েকজন এই অভিযোগ করেছেন।
যে গানের দুটি লাইন লিখে স্টোরিতে দিয়েছেন সঞ্জয়, সেটি লালনের গানের অংশ তা জানেন কি না, জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘কোনো কিছু জানার থাকলে থানায় আসেন। আমি এখন ব্যস্ত আছি, কথা বলতে পারব না।’ বলে ফোন কেটে দেন ওসি।
![]() |
গ্রেফতার সঞ্জয় রক্ষিত |
মেয়েদের খাতনার বিষয়ে হাদিসে যা পাওয়া যায়, হাদিসটি অনুভূতির অঙ্গধারীদের কাজে লাগতে পারে:
উম্মে আত্বীয়া হতে বর্ণিত, জনৈক মহিলা মদীনায় (মেয়েদের) খাতনা করাতো। নাবী তাকে বললেন, খাতনাস্থানের অংশ খুব বেশি কাটিও না। কেননা এটা (কম কাটার জন্য সঙ্গমের সময়) নারীর জন্য অধিক তৃপ্তিদায়ক এবং স্বামীর কাছে খুবই প্রিয়।[ অপর বর্ণনায় রয়েছে: ‘‘যখন নারীদের খাতনা করবে, তখন একেবারে কেটে শেষ করে দিও না। কেননা এতে চেহারা উজ্জল থাকবে এবং স্বামীর জন্য তা তৃপ্তিদায়ক হবে’’।
যঈফ; আবূ দাউদ (৫২৭১) এবং তিনি একে যঈফ বলেছেন। মুনকার; খতীব বাগদাদী প্রণীত আত তারিখ-(৫/৩২৭), জামি’ আহকামুন নিসা (১/১৯)।
লালনের গানের কথা:
সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে।
লালন বলে জাতের কি রূপ
দেখলাম না এই নজরে।।
সুন্নত দিলে হয় মুসলমান
নারীলোকের কি হয় বিধান।
বামন চিনি পৈতে প্রমাণ
বামনী চিনি কি করে।।
কেউ মালা কেউ তসবিহ গলে
তাইতে কি জাত ভিন্ন বলে।
আসা কিংবা যাওয়ার কালে
জাতের চিহ্ন রয় কারে।।
জগৎ জুড়ে জাতের কথা
লোকে গল্প করে যথাতথা।
লালন বলে জাতের ফাতা
ডুবাইছি সাধবাজারে।।