তসলিমা নাসরিনের মন্তব্য: হায়দার আকবর খান রনো ছিলেন কম্যুনিস্ট পার্টির নেতা, একই সঙ্গে বুদ্ধিজীবী এবং লেখক। ৮১ বছর বয়স হয়েছিল। অকালমৃত্যু আমাকে কষ্ট দেয়, কিন্তু ৮০ পার করে কারও মৃত্যু হলে আমি কান্নাকাটি করি না। বেঁচে থাকাকালীন তিনি মানুষের শ্রদ্ধা পেয়েছেন। বহুবার সম্মানিত হয়েছেন। তাঁর ছিল সার্থক বেঁচে থাকা।
কম্যুনিস্ট পার্টির বড় নেতা, সুতরাং এ খুব স্বাভাবিক যে তিনি নাস্তিক ছিলেন। তিনি যেহেতু কোনও জাল কম্যুনিস্ট নন, তিনি অবশ্যই নাস্তিক। কিন্তু খবরে দেখলাম যে ইসলামি মতে তাঁর নামাজে জানাজা হবে, তাঁর দাফন হবে, তাঁকে কবর দেওয়া হবে। কেন তিনি তাঁর মরণোত্তর দেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় দান করে গেলেন না? কেন সারাজীবন ধর্মহীন জীবন কাটিয়ে মৃত্যুতে ধর্মের কাফন গায়ে জড়াচ্ছেন? এসব প্রশ্নের উত্তর আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে।
ভেবেছিলাম তাঁর সন্তান সন্ততি নাতি নাতনিরা দেশে বাস করেন। না, তাঁরা পুঁজিবাদি দেশে বাস করেন। তাঁরা ফেরার পর জানাজা হবে।
প্রবীণ রাজনীতিক হায়দার আকবর খান রনোর জীবনাবসান
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা হায়দার আকবর খান রনো মারা গেছেন। শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ৫ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
হায়দার আকবর খান রনোর মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জলি তালুকদার।
জলি তালুকদার বলেন, প্রবীণ এই বামপন্থী নেতা ধানমন্ডিতে নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গত সোমবার সন্ধ্যায় বেশি অসুস্থবোধ করলে তাঁকে রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই মারা যান তিনি। তাঁর তীব্র শ্বাসকষ্ট ছিল।
জলি তালুকদার আরও বলেন, হায়দার আকবর খান রনোর শেষবিদায়ের আনুষ্ঠানিকতার বিষয়ে স্থান ও সময় পরে জানানো হবে।
মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক হায়দার আকবর খান রনো পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও নেতা। তিনি একাধিক বইয়ের লেখক।
২০১০ সালে মতভিন্নতার কারণে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ছেড়ে হায়দার আকবর খান সিপিবিতে যোগ দেন। ২০১২ সালে তাঁকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। এরপর তিনি সিপিবির উপদেষ্টা হন।
হায়দার আকবর খান রনো ১৯৪২ সালের ৩১ আগস্ট অবিভক্ত ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস নড়াইলের বরাশুলা গ্রামে।
হায়দার আকবর খান রনোর কর্মজীবন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র থাকা কালীন তিনি গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সংশ্লিষ্ট হন। ১৯৬২ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তার সক্রিয় রাজনীতি শুরু। তিনি ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭০ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।[ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের রণাঙ্গনের সৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও নেতা। ১৯৭২ সালে তিনি অন্যান্য রাজননৈতিক সহকর্মীদের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (লেনিনবাদী) গঠন করেন। ১৯৭৯ সালে দলের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নামকরণ করা হয়।[ ১৯৭৯-৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।[ তিনি ১৯৮২-১৯৯০ এর সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন ও ১৯৯০ এর গণ অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও নেতা ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে তাকে চারবার কারারুদ্ধ হতে হয়েছিল এবং সাতবার আত্মগোপনে যেতে হয়েছিল।
২০০৬ সালে রনো ১৪১১ বঙ্গাব্দের প্রথম আলো বর্ষসেরা বই পুরস্কার পান। তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। ২০১২ সালে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হন।
তার লেখালেখি ও প্রকাশনা:
শতাব্দী পেরিয়ে (আত্মজীবনীমূলক বই)। ফরাসী বিপ্লব থেকে আক্টোবর বিপ্লব। পুজিবাদের মৃত্যু ঘন্টা। সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের সত্তর বছর। গ্রাম শহরের গরীব মানুষ জোট বাধো। মার্কসবাদের প্রথম পাঠ। মার্কসীয় অর্থনীতি। মার্কসবাদ ও সশস্ত্র সংগ্রাম। সিপিবির বন্ধুদের প্রতি (পুস্তিকা)। চীনপন্থী বন্ধুদের প্রতি (পুস্তিকা)। শ্রেণী দৃষ্টিকোন থেকে রবীন্দ্রনাথ। মানুষের কবি রবীন্দ্রনাথ। কোয়ান্টাম জগৎ- কিছু বৈজ্ঞানিক ও দার্শনীক প্রশ্ন। বাংলা সাহিত্যের প্রগতির ধারা- প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড। পলাশী থেকে মুক্তিযুদ্ধ- প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড। মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীরা (সম্পাদিত)। স্টালিন প্রসঙ্গে। অক্টোবর বিপ্লবের তাৎপর্য ও বর্তমান প্রেক্ষাপট। নির্বাচিত প্রবন্ধ সংকলন (প্রথম খণ্ড)। এগুলো তাঁর উল্লেখযোগ্য বই। তার আরো আরো অনেক উল্লেখযোগ্য বই ও প্রকাশনা রয়েছে।
Read in English:
Janaza of communist leader and relevant question of Taslima Nasreen