জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হলে কী জঙ্গি তৎপরতা বাড়বে?

জামায়াত নানারকম জঙ্গি এবং সন্ত্রাসী সংগঠনের ওপর ভর করে তাদের অপ-তৎপরতা অব্যাহত রাখার চেষ্টা নতুন করে করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

গতকাল ১৪ দলের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে। এব্যাপারে সরকারকে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ১৪ দলের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে অনুষ্ঠিত ১৪ দলের সভায় এ ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে সর্বসম্মতিক্রমে। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের একদিন পরে আজ আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিছুল হক জানিয়েছেন আগামীকাল একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে এই দলটিকে নিষিদ্ধ করার এখতিয়ার সরকারের আছে।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন জঙ্গি এবং সন্ত্রাসী সংগঠনকে এর আগেও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এখন জামায়াতের রাজনীতিকেও নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে জামায়াতের রাজনীতি যদি নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে তার প্রভাব রাজনীতিতে কী পড়বে?

২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার করেছিল। আর সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য ২০০৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল গঠন করা হয় এবং একে একে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে। এই বিচারে মূল আক্রান্ত দল ছিলো জামায়াত ইসলাম। এর আগে ২০১৩ সালে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে এবং জামায়াতের দাঁড়িপাল্লা প্রতীক অবৈধ ঘোষণা করে। ফলে জামায়াত একটি অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে তখন থেকেই কাজ করছে। এবং দলীয় প্রতীক ব্যবহার করেও তারা নির্বাচন করতে পারছে না।

এমন বাস্তবতায় অনেকে মনে করেছিলো জামায়াতের রাজনীতি বোধহয় আস্তে আস্তে নিষ্পেষিত হয়ে যাবে। জামায়াত ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা দেখা যায় ভিন্ন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আব্বাস আলী খান, আলী আহসান মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর মতো ঘৃণীত যুদ্ধাপরাধীরা দণ্ডিত হবার পরও জামায়াত নিঃশেষ হয়ে যায়নি। বরং জামায়াত সংগঠিত হয়েছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে যে সহিংসতা এবং তাণ্ডব পরিচালনা হয়েছে তার ব্লু-প্রিন্ট জামায়াত কর্তৃক প্রণীত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এরকম পরিস্থিতিতে দু’টি বিষয় সামনে এসেছে— প্রথমত জামায়াত যে একটি সন্ত্রাসী দল এবং তারা যে সবসময় সন্ত্রাস এবং নৈরাজ্যকে মদদ দেয় এটি প্রমাণিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত জামায়াতের যে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সারাদেশে বিস্তৃত তা পরিষ্কার হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে সকলের সামনে যে প্রশ্নটি মুখ্য হয়ে উঠেছে সেটি হলো—এরকম একটি শক্তিশালী অবস্থানে থাকা জামায়াতের রাজনীতি যদি নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে তার প্রভাব রাজনীতিতে কি পড়বে?

এর আগেও রাজনীতিতে জামায়াত নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছিল। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে জামায়াতের অপকর্মের জন্য তাদের নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সরকার নানা বাস্তবতা বিবেচনা করে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেনি। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতেও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার একটি রিট পিটিশন বিচারাধীন আছে। সেখানেও সরকার ইচ্ছে করেই মনোযোগ দেয়নি। কারণ সরকারের মধ্যে একটি ভাবনা ছিলো, জামায়াতকে যদি নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে জামায়াতের জঙ্গি এবং গুপ্ত তৎপরতা বাড়বে। জামায়াত সন্ত্রাস-সহিংসতার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিবে। তখন তাকে একেবারেই জবাবদিহিতার মধ্যে রাখা যাবে না। আর একারণেই সরকার জামায়াতকে তখন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি।

কিন্তু এখন যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এবং ১৪ দল থেকে বিষয়টি এসেছে তখন সরকার বাধ্য হয়েই এটি করেছে। তবে এর ফলে জামায়াতের সহিংসতা তৎপরতা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতোদিন যেভাবে অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত অবৈধভাবে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছিলো এখনো তার অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা অব্যাহত রাখবে। তবে আগে যেমন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা যেত বা জবাবদিহিতার আওতায় আনা যেত এখন সেটি আর করা যাবে না। ফলে জামায়াত নানারকম জঙ্গি এবং সন্ত্রাসী সংগঠনের ওপর ভর করে তাদের অপ-তৎপরতা অব্যাহত রাখার চেষ্টা নতুন করে করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন