নৈরাজ্যবাদীদের হিরো মানজুর আল মতিনের পিতৃ-মাতৃ পরিচয়

মানজুর আল মতিন পীতমের আপন নানী হাফেজা আসমা খাতুন ১৯৯১ সালের নির্বাচনে চার দলীয় জোটে জামায়াত হতে ২৩ নং সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপি নির্বাচিত হন। হাফেজা আসমা খাতুন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা থাকাকালীন শিবিরের ছাত্রীসংস্থার তত্ত্বাবধানে ছিলেন। শিবিরের মূল ধারার রাজনীতির উপর উনার একাধিক বই রয়েছে। এছাড়াও মাসিক ও ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিনে নিয়মিত প্রবন্ধ ও কলাম লিখতেন। 

পীতমের আপন মামা সাইফুল্লাহ মনসুর যুদ্ধাপরাধী নিজামীর জামাতা। পীতমের আপন খালা মুন্নি যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বড় ছেলে মামুন আল আযমীর বউ। মানজুর আল পীতমের পিতা সাবেক বিচারপতি আব্দুল মতিন আদালত প্রাঙ্গণে জামায়াতপন্থী আইনজীবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। 

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারকার্যে বার বার বিব্রত বোধ করা জামাতি সাবেক বিচারপতি মতিনের শিবির পোলাটা সর্বোচ্চ আদালতে ম্যা ম্যা করেই যাচ্ছে। আদালতের স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে সকলের সামনে সংবাদ সম্মেলন বসাচ্ছে, এখন আদালত অবমাননা হয় না? আইন বিভাগের ৩১তম ব্যাচের এই ছাত্র তার ছাত্রজীবনে ছিল শিবিরের মোটিভেশনাল স্পিকার। 

নৈরাজ্যবাদীদের মূল্যায়ন:

অনেক বাংলা সিনেমা দেখেছি যেখানে সাবানা হুট করে আইনজীবী হয়ে যায় সন্তান বা স্বামীর প্রয়োজনে। মানজুর আল মাতিনকে মূলত সবাই চিনে নিউজ প্রেজেন্টার বা উপস্থাপক হিসেবে। অথচ যখন দেশের প্রয়োজন হলো, নিজের আইনী পোশাকটা লাগিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন স্টুডেন্টদের পক্ষে, দেশের পক্ষে! যারা তাকে নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে দেখে অভ্যস্ত- সবার কাছে ব্যাপারটা বাংলা সিনেমার মতই মনে হওয়ার কথা! জীবনের গল্প মাঝেমধ্যে সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। মানজুর আল মাতিন আমাদের সেটাই দেখিয়ে দিলেন।

নৈরাজ্যবাদীদের পক্ষে মানজুর আল মতিন

অ্যাডভোকেট মানজুর আল মতিন পীতম সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের তালিকাভুক্ত আইনজীবী। তার বাবা বিচারপতি আব্দুল মতিন আপিল বিভাগের বিচারপতি ছিলেন। বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করছেন। পীতম ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসএসি ও এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। 

শিক্ষাজীবন শেষে তিনির আইনপেশায় মনোনিবেশ করেন। প্রখ্যাত সংবিধান বিশেষজ্ঞ প্রয়াত মাহমুদুল ইসলামের সাহচার্যে তার আইন পেশায় হাতেখড়ি। বর্তমানে প্রখ্যাত দেওয়ানি আইন ও রিট বিশেষজ্ঞ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগীর জুনিয়র হিসেবে কাজ করছেন। আইনপেশা পরিচালনার পাশাপাশি পীতম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে সংবাদ পাঠ করেন ও টকশো উপস্থাপনা করেন। তার স্ত্রী পেশায় চিকিৎসক। তিনি ১২ বছর বয়সী এক সন্তানের জনক।

কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট মানজুর আল মতিন পীতম বলেন, আমি আমার সিনিয়র প্রয়াত মাহমুদুল ইসলামের কাছ থেকে শিখেছি যে, আইনজীবী হিসেবে সমাজের, মানুষের ও আইনের প্রতি দায়বদ্ধতা কাকে বলে। ১৭ জুলাই রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ফারহান আমার চোখের সামনে গুলিতে মারা গেল। ওইদিন আমি আমার স্ত্রী ও আমার বন্ধু রিন্টু আমরা যখন দেখলাম বাচ্চাদের ওপর গুলি হচ্ছে, বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নিরস্ত্র আবু সাঈদকে এভাবে মেরে ফেলা হলো। তারপর আমার কাছে মনে হয়েছে, কোনো মানুষ সে হোক আওয়ামী লীগের, হোক সে বিএনপির, হোক সে যেকোনো দলের, কোন মানুষ নিরাপদ নয়।

তিনি বলেন, সে কারণে আমার মনে হয়েছে পরের গুলিটা তো আমার বুকে লাগতে পারে। কারণ ফারহান কি আমার সন্তান নয়? আবু সাঈদ কি আমার সন্তান নয়? তারপর থেকে রাস্তায় থাকছি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে আমাদের ভাইয়েরা রাস্তায় নেমেছেন। তারা জানেন রাস্তায় নামলে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। এই মানুষগুলো কত কষ্ট করে, সর্বোচ্চ বিক্রি করে বিদেশে যান আমরা জানি। সেই মানুষগুলো যখন রাস্তায় নেমেছেন, তাদের জীবন শেষ হয়ে যাবে, তারপরও তারা প্রতিবাদ করেছেন। আর আমরা যারা আরাম-আয়েশে এতগুলো বছর কাটিয়েছি, তাদের ঘরে বসে থাকার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।

ছাত্রশিবিরের নেতা নিহত আবু সাঈদ

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুলিতে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসেন, বাহবাও পান তিনি। কিন্তু তার ওই আন্দোলনের আড়ালে ছিল আরেক রূপ- যা প্রকাশ করেছেন তার সতীর্থরা। সেই আবু সাঈদকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা দাবি করা হয়েছে। খোমেনি এহসান নামে একটি ফেসবুক পেজে এমন দাবি করা হয়।

এই ফেসবুক পেজে বলা হয়, ‘এবারের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ঐতিহাসিক দিক হলো ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা ব্যাপকহারে সর্বত্র অংশগ্রহণ করেছে। বিশেষ করে রংপুরের আবু সাঈদের শাহাদাত নিয়ে গোটা দুনিয়ায় যে তোলপাড় চলছে, এই শহীদও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা ছিল।’

পেইজটিতে আরো লেখা হয়, ‘আমার পর্যবেক্ষণ গত ১৬ বছরের নির্যাতন নিপীড়নের সময় শিশু থেকে কিশোর তরুণে পরিণত হওয়া শিবিরের লোকেরা একটা সোনালী প্রজন্ম হিসাবে গড়ে উঠেছে। তারা যেভাবে এবারের আন্দোলনে শামিল হয়েছে তা গোটা জাতির জন্য বার্তা। বিশেষ করে ইসলামী দলগুলার নানা বিতর্কিত অবস্থানের মধ্যে জেনারেল শিক্ষিত ও আলীয়া মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিবির কর্মীরা যেভাবে ছাত্র-জনতার ভ্যানগার্ড হয়েছে তাতে করে ইসলামী রাজনীতি নতুন জীবন লাভ করেছে। শিবির বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতির এক নিয়ামক শক্তি। আমি শিবিরের বর্তমান প্রজন্মের মেধার জোরটা ভালোমতই বুঝতে পারছি।’ ‘... কিন্তু চলমান আন্দোলনে শামিল লোকজন সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর, তাদের ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা ও সাহস দেখে রীতিমতো শিহরিত হচ্ছি। যেন কৈশোরের সেই মুগ্ধতা ফিরে আসছে। আমার বিশ্বাস ছাত্র আন্দোলন দমন করতে শিবিরের ওপর সরকার যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ কোনো পরীক্ষা, বাতিল ও তাগত হয়তো ভাববে নির্যাতন করায় শিবির ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বাস্তবতা হলো জান্নাতে শহীদ নেতাদের সঙ্গে শহীদ শিবির নেতাদের সাক্ষাৎ ঘটবে আর জমিনে আমরা এক বিশালসংখ্যক ইসলামী লিডারশিপ পেতে যাচ্ছি, বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির নেতৃত্বশূন্যতা খুব শিগগির কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ।’

এছাড়া নিহত আবু সাঈদের ফেসবুকে ইসলামী ছাত্র শিবিরের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পোস্ট করতে দেখেন অনেকে। এমনকি জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে আবেগঘন পোস্টও দেন সাঈদ।

সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন আবু সাঈদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। মা-বাবার ৯ সন্তানের মধ্যে একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সন্তান ছিলেন আবু সাঈদ। গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন পার্ক মোড়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের তুমুল সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় মিছিল-সংঘর্ষের সম্মুখে থেকে লাঠি হাতে নিয়ে অন্যদের সঙ্গে পুলিশের দিকে বারবার তেড়ে যায় এবং বুক পেতে দেয় আবু সাঈদ। একপর্যায়ে তার বুকে একাধিক গুলি লাগলে মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর আন্দোলনের উত্তাপ আরো ছড়িয়ে পড়ে।

ওয়াকিবাল মহল মনে করছেন, আবু সাঈদের মৃত্যুকে ঘিরে শুরু হয় দেশে আরেক রাজনীতি। আন্দোলনে সমর্থন ও সহযোগিতা দেয়া সরকারবিরোধী পক্ষ-জামায়াত-বিএনপি ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। সাধারণ শিক্ষার্থী বলে তার প্রতি সহমর্মিতা দেখানো হয়। সুপরিকল্পিত ও সংঘবদ্ধভাবে তারা কোটাবিরোধী আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপান্তরের চেষ্টা করে। আর এতে আবু সাঈদদের মতো ঘাপটি মেরে থাকা দুর্বৃত্তদের সর্বাত্মক কাজে লাগানো হয় ধ্বংসাত্মত কার্যকলাপে। সাঈদের মৃত্যুর পরে বেরোবির অধ্যাপকদের একাংশ দাবি তুলেছিলেন, প্ররোচনা বা সংঘাতের পরিস্থিতি ছাড়াই সাঈদের ওপর রবার বুলেট ছুড়েছিল পুলিশ।

আবু সাঈদের মৃত্যুর পরদিন ১৭ জুলাই রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের তাজহাট থানায় এ ব্যাপারে একটি মামলা করে পুলিশ। মামলার বিবরণে বলা হয়, আসামিরা উচ্ছৃঙ্খল ২-৩ হাজার আন্দোলনকারী ছাত্র নামধারী দুর্বৃত্ত। তাদের সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির সমর্থিত নেতাকর্মীও রয়েছে। পুলিশ সদস্যদের মারপিট করে তাদের মারাত্মক আহত করে ও সড়ক অবরোধে থাকা উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রদের মধ্য হতে বেশ কিছু ছাত্রবেশী সুবিধাভোগী রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনরত দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন দিক থেকে বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল ও তাদের নিকটে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র হতে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশও এপিসি গাড়ির মধ্য হতে ১৬৯ রাউন্ড রাবার বুলেট ফায়ার করে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিভিন্ন দিক থেকে আন্দোলনকারীদের ছোড়া গোলাগুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীকে রাস্তায় পড়ে যেতে দেখা যায়। তখন তার সহপাঠীরা তাকে ধরাধরি করে জরুরি চিকিৎসার জন্য বিকাল ৩টা ৫ মিনিটে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত ছাত্রের নাম আবু সাঈদ (২৩)।

এই আন্দোলন শুধুমাত্র নৈরাজ্যের মাধ্যমে অপশক্তির ক্ষমতা দখলের কারসাজি

এই নৈরাজ্যবাদের সাথে ছাত্র আন্দোলনের সম্পর্ক আছে নিশ্চয়। নাহলে এতো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পরও ছাত্র আন্দোলন চলছে কেনো? যেখানে তাদের সব দাবী বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

আর নিশ্চয় কোটা বিরোধী আন্দোলনের কোন প্রয়োজনই ছিলো না, যখন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করেছিলো।

এই আন্দোলন শুধুমাত্র নৈরাজ্যের মাধ্যমে অপশক্তির ক্ষমতা দখলের কারসাজি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন