ফজলুল বারী
আন্দোলনকারী সিপিবি বাসদ নেতারা কান্নায় ভাংগিয়া পড়িয়া বলিয়াছেন, তত্বাবধায়ক সরকার গঠন লইয়া কেহ তাহাদের সংগে আলোচনা করে নাই। মান্না, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি অবশ্য লজ্জায় এমন কথা প্রকাশ্যে বলেন নাই। বাংলাদেশ জাসদের কোন বক্তব্য কী কেহ দেখিয়াছেন? প্রথম হইতে কিন্তু সেনা প্রধান জামায়াতের সংগে আলোচনা করিবার বিষয়টি একাধিকবার বলিয়াছেন। বামপন্থী কোন দল ব্যক্তির নাম তিনি জানেন বলিয়া মনে হয় নাই। আল্লাহু আকবর বলা সেনা ও বিজিপি সদস্যদের ভিডিও প্রকাশ হইয়াছে।
সচিবালয়সহ সবকিছু দখল করিয়া ফেলিয়াছে বিএনপি জামায়াত। লুটতরাজকারীদের যে সব লক্ষ্য প্রকাশ পাইয়াছে তাহাদেরও বিএনপি জামায়াত সমর্থক বলিয়া সবার মনে হইয়াছে। ৫ আগষ্টের পর হইতে ২৩৫ জনকে হত্যার কথা মিডিয়ায় গুরুত্ব পায় নাই। ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সব দলীয় বিচারপতি, পুলিশ সদস্যদের অপসারন দাবি করিয়াছেন। আওয়ামী লীগের পর বিএনপি জামায়াতের বিচারপতি, পুলিশ সদস্য পাওয়া যাইতে পারে। নতুবা ‘নির্দলীয়’ এইসব ছাত্র নেতাদের বিচারপতি, পুলিশ সদস্য সহ গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিতে হবে। কারন বাংলাদেশে নির্দলীয় বলিয়া কেহ নাই।
ছাত্র নেতাদের উপদেষ্টাদের সবাই বিএনপি জামায়াত দলীয়। ছাত্র নেতারাও বিএনপির সাথে আলোচনা করিয়াছেন। এটি কোন অরাজনৈতিক দল নয়। একদার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে ধবংসযজ্ঞ ঘটিয়া গেল ইহাতে করিয়া বাংলাদেশকে মৌলবাদী মুসলমান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সমুদয় বিষয়াদি প্রতিষ্ঠিত হইল। কারণ বাংলাদেশে আর কোন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি নাই। কোন ধরনের শিল্পকর্ম নাই। জাদুঘর সিনেমাহল সমূহ ভাঙ্গার কাজ সফল হইয়াছে। জাতির পিতার ধংস করা ভাস্কর্য সমূহে তাহারা মূত্র করিয়া তাহাদের জাত চিনাইতেছে। এই লুটতরাজ মনে করাইয়া দিলো বাংলাদেশে কেনো কোনদিন কোন দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন হয় না।
মুসলমান মৌলবাদী রাষ্ট্রের আপদ যে গুটিকয় হিন্দু এখানে ছিলেন তাহাদের অনেকে এরমাঝে পালাইয়া চলিয়া গিয়াছেন। অনেকের রোহিঙ্গাদের মতো আশ্রয় নিয়াছেন সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে। আন্দোলন সমর্থক হিন্দুরাও তাদের পোষ্ট লুকাইয়া ফেলিয়াছেন। মোটকথা বাংলাদেশকে সরাসরি আবার পাকিস্তান না বলিয়াও মনের মধ্যে গোপন যে স্বপ্ন তা পূরণের পথ প্রশস্ত হইল। সরল ছেলেপুলেরা বুঝিল না তাহাদের আন্দোলন কিভাবে ছিনতাই হইয়া গিয়াছে। টেলিভিশনগুলিতে অবশ্য এই সব নৈরাজ্যের জন্য ভারতকে, পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য দায়ী দল আওয়ামী লীগকে দায়ী করা শুরু হইয়া গিয়াছে অথবা এভাবেই চলিতে থাকিবে। ইহাই বাংলাদেশের কথিত দ্বিতীয় স্বাধীনতার ইশতেহার।